[ad_1]
চীনের তৈরি অত্যাধুনিক মাল্টিরোল অ্যাটাক হেলিকপ্টার জেট-১০ এখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে। এক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, পাকিস্তান আর্মি এভিয়েশন কর্পস এই হেলিকপ্টারগুলো মাঠপর্যায়ে ব্যবহার শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সরবরাহ পাকিস্তানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতায় বড় ধরনের আপগ্রেড এবং আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
সাউথ চায়না মনিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হেলিকপ্টারের একটি সংস্করণ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এরই মধ্যে চীন-ভারত সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় মোতায়েন করেছে।
গত মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও আপলোড করেন, যেখানে হেলিকপ্টারটিকে সামরিক ঘাঁটি থেকে আকাশপথে উড়তে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘পাকিস্তানের জেট-১০ অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রথম ঝলক। এটি আকাশ থেকে মাটিতে আঘাত হানতে সক্ষম পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাজানো।’
এর আগে সোমবার আরেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী একটি জেট-১০ এর ছবি পোস্ট করেন। হেলিকপ্টারটির ফিউজলেজ ও লেজে ‘পাকিস্তান আর্মি’ লেখা ও ‘৭৮৬-৩০১’ সিরিয়াল নম্বর ছিল। এই ছবিই পাকিস্তান আর্মি এভিয়েশন কর্পসের মধ্যে জেট-১০ এর অপারেশনাল স্ট্যাটাসের প্রথম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২ আগস্ট) মুলতান গ্যারিসনে সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল সাইয়েদ আসিম মুনির এই হেলিকপ্টারগুলোর উদ্বোধন করেছেন।
জুলাই মাসের শুরুতে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানায়, পাকিস্তান ৪০টি জেট-১০ অ্যাটাক হেলিকপ্টার তাদের বাহিনীতে যুক্ত করেছে, যা তাদের বিমানযুদ্ধের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এটি কেনার ও সরবরাহের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মার্চ মাসে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে হেলিকপ্টারগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এই খবর এমন এক সময়ে সামনে আসছে, এর ঠিক কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত আরেকটি চীনা বিমান জে-১০সি বৈশ্বিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। গত ৭ মে মাসে পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের সময় এই জে-১০সি ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল।
ওই সংঘর্ষের পর থেকে চীন ও পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন। এর মধ্যে জুনে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠক এবং গত মাসে ইসলামাবাদে বিমানবাহিনীর প্রধানদের মধ্যে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত ২৫ জুলাই চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রথম র্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান ঝাং ইউওক্সিয়া বেইজিংয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। কাশ্মীরে সর্বশেষ উত্তেজনার পর থেকে ঝাং হলেন পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী সর্বোচ্চ পদস্থ পিএলএ কর্মকর্তা। তিনি সামরিক সম্পর্ককে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরেন এবং কৌশলগত সমন্বয়, গভীরতর সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
চার দশক ধরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বহরে শুধু এএইচ-১ এফ কোবরা ও সীমিতসংখ্যক রুশ নির্মিত এমআই-৩৫ হিন্ডস হেলিকপ্টার ছিল। কিন্তু এই পুরোনো বিমানগুলোকে এখন আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনের জন্য অপ্রতুল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জেট-১০ হেলিকপ্টারের বৈশিষ্ট্য
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, জেট-১০ হেলিকপ্টারগুলোর ইঞ্জিনের শক্তি, সুরক্ষা ব্যবস্থা ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষমতা (ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম) পিএলএর স্ট্যান্ডার্ড ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে গেছে।
জেট-১০ ভারতের কাছে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের চেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম বলে দাবি করা হচ্ছে। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিমি। এটি অস্ত্র ও জ্বালানিবোঝাই অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে টানা ৮০০ থেকে ১ হাজার ১২০ কিমি পর্যন্ত উড়তে পারে।
পাইলটের সুরক্ষা বৃদ্ধিতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে টাইটানিয়াম ও সিরামিক কম্পোজিট আর্মার। এতে রয়েছে উন্নত অ্যাভিওনিকস, সক্রিয় ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) ভিত্তিক মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং ডাইরেকশনাল ইনফ্রারেড কাউন্টার মেজারস। এসব প্রযুক্তি পাইলটদের যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিক সচেতনতা ও মিসাইল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা—রাডার, অতিবেগুনি ও লেজার সতর্কতা, উন্নত ইনফ্রারেড প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা, ইঞ্জিন এক্সহস্ট পরিবর্তন ও ইনফ্রারেড সাপ্রেসর, যা হেলিকপ্টারের তাপ চিহ্ন কমিয়ে দেবে। এগুলো চীনা হেলিকপ্টারগুলোতে আগে দেখা যায়নি।
অস্ত্রসজ্জায় রয়েছে ছয়টি আর্মস স্টেশন, যা থেকে নিক্ষেপ করা যাবে ২৫ কিমি পাল্লার সিএম-৫০২ কেজি প্রিসিশন স্ট্রাইক মিসাইল এবং ২৩ মিমি কামান। এই প্রযুক্তি পুরোনো মডেলের এএইচ-১ এফ ও টি-১২৯ হেলিকপ্টারের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
পাকিস্তানের এই উন্নত হেলিকপ্টার মোতায়েনের বিপরীতে ভারতও নিজস্ব বহর আধুনিকায়ন করছে। গত ২২ জুলাই ভারতীয় সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম তিনটি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি গার্ডিয়ান হেলিকপ্টার কিনেছে। সর্বশেষ সংস্করণের এই হেলিকপ্টারগুলো পশ্চিম সীমান্তে, অর্থাৎ পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]