[ad_1]
রাজধানীর উত্তরায় গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী সাজিদ হোসেন মৃধার বাবা কবির হোসেন বলেছেন, ছেলের হত্যার ঘটনায় মামলা করার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার নিয়মিত হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি হুমকির ভয়ে মামলা তুলে নিতে চান।
শনিবার (২ আগস্ট) গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২৫’-এর একটি পর্বে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবকদের সমাবেশ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা আরেফিন। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোতাস্ছেম বিল্লাহর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার দ্বীন-ই ইসলাম, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিসহ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে কয়েকজন শহীদের মা-বাবা বক্তব্য দেন। সন্তান হারানোর বেদনা ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ উঠে আসে তাঁদের কণ্ঠে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাজিদ হোসেন মৃধার বাবা কবির হোসেন।
কবির হোসেন বলেন, ‘আমি আমার পরিবার নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গি পশ্চিম থানাধীন এরশাদনগর এলাকায় বসবাস করি। আমার ছেলে মারা যাওয়ার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেছি। মামলা করার পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা ও সন্ত্রাসীরা আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা করার পর আমি আরও বড় বিপদে পড়েছি। মনে হয় এখন মামলাটি তুলে নিতে পারলে আমি ও আমার পরিবার বেঁচে যাই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়রানি এবং হুমকি-ধমকি আর আমরা সহ্য করতে পারছি না। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘কীভাবে মামলাটি তুলে নিতে পারি, আপনারা কি আমাকে বলতে পারেন?’
তাঁর বক্তব্য শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিষয়টি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপস্থিত কর্মকর্তার দৃষ্টিতে আনলেও তাঁরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
অনুষ্ঠান শেষে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কবির হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা সংসার চালাতে পারছি না। কাজকর্ম করতে পারছি না। সব সময় আতঙ্কে থাকি।’ তিনি অভিযোগ করেন, টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুবহান মিস্ত্রির ছেলে ইসমাইল হোসেন, সুবহান, বাঙ্গারী মাসুদ, জলিল গাজী, সাবেক কাউন্সিলর আমির হামজা ও স্থানীয় অপরাধী চক্রের নেতা ‘চোর শফিকুল’ বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
সাজিদ হোসেন মৃধা গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী এরশাদনগর এলাকার খাপারা মামুদী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট উত্তরা এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে বিকেল ৪টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয় সে। রাত ৮টার দিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তাঁর লাশের সন্ধান পায় পরিবার। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।
ঘটনার পর কবির হোসেন আদালতের মাধ্যমে মামলা করতে চাইলে আদালত উত্তরা পশ্চিম থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কবির হোসেন বলেন, ‘মামলা করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হুমকির বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি আসামিদের ফোন নম্বর নিলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং তিনি আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা নেন এবং চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বাদীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমরা হুমকির বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো আসামির সঙ্গে যোগাযোগ বা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সত্য নয়।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) জাহিদুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি এখন জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পরে তিনি প্রতিবেদক কবির হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁকে অফিসে এসে বিস্তারিত জানাতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসির সঙ্গে কথা বলব, যা প্রয়োজন, ব্যবস্থা নেব।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]