[ad_1]
ফরিদপুর থেকে বোনের সঙ্গে লোকাল বাসে রাজবাড়ীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল ছয় বছরের শিশু প্রকৃতি হিয়া হালদার। কিন্তু কে জানত, এ বাসযাত্রা ছোট প্রকৃতির জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলবে। যাত্রীবাহী বাসটির রেডিয়েটর (বিশেষ ধরনের কুলিং সিস্টেম) বিস্ফোরণে গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে গেছে তার দুটি পা। বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে সে।
প্রকৃতি রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের গোবিন্দ হালদারের মেয়ে। ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর ভাড়া বাসায় বড় বোন শিল্পী হালদারের পরিবারের সঙ্গে থাকে সে। ফরিদপুর সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে গ্রুপে পড়ে সে। গত ২৪ জুলাই ফরিদপুর থেকে কালুখালীতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় সে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির দুটি পায়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অসহ্য যন্ত্রণায় মাঝেমধ্যে চিৎকার করছে। পাশে মা কৃষ্ণা হালদার বসে অঝোরে কাঁদছেন। সবার আদুরে ছোট বোনের অসহনীয় যন্ত্রণা দেখে চোখ ছলছল করছে পাশে বসে থাকা দুই বোনের। আজ ছুটির দিনে হাসপাতালের ওই বিভাগে চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। কর্তব্যরত নার্স জানান, শিশুটির দুই পায়ের হাঁটু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে, যা শরীরের প্রায় ১০ শতাংশ। শিশুটির স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে সময় লাগবে।
শিশুটির বড় বোন শিল্পী হালদার জানান, গত ২৪ জুলাই মেজ বোন পূর্ণিমা হালদারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল প্রকৃতি। প্রথমে ফরিদপুর থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত একটি লোকাল বাসে পৌঁছায় তারা। সেখান থেকে কুষ্টিয়াগামী রাজবাড়ী মালিক সমিতির লোকাল যাত্রীবাহী বাস আলিফে ওঠে। বাসটির চেয়ার খালি না থাকায় সামনের অংশে ইঞ্জিনের পাশে থাকা একটি সিটে বসেন পূর্ণিমা হালদার এবং তাঁর কোলে বসে ছিল প্রকৃতি। একপর্যায়ে বিকেল ৫টায় রাজবাড়ী জেলা শহরের মুরগির ফার্ম এলাকায় পৌঁছলে বাসটির রেডিয়েটর বিস্ফোরণ হয়। এ সময় প্রকৃতির দুই পা গরম পানি লেগে ঝলসে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পূর্ণিমা হালদার বলেন, ‘আমরা যখন থেকে বাসটিতে উঠেছিলাম, তখন থেকে ইঞ্জিনের পাশে থাকা সিটগুলো গরম হতে থাকে। রাজবাড়ী শহরে পৌঁছানোর পর বাসটি থামিয়ে চালক সালাম হোসেন তাঁর সহকারীকে ইঞ্জিনের ওপরের অংশ খুলে দেখতে বলেন। তখন কোনো যাত্রীকে নামতে বলা হয়নি। ওই অংশ খুলে দেখেন, ভেতরের পাখাটি বন্ধ রয়েছে। এরপরই রেডিয়েটরের মুখ খুলতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। চারদিকে গরম পানি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন অনেকে ভয়ে জানালা দিয়েও বের হতে থাকে, কিন্তু আমার ছোট বোনকে নিয়ে বের হতে পারিনি।’
বড় বোন শিল্পী হালদার বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা রাজবাড়ী মালিক সমিতিতে অভিযোগ জানাতে গেলে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। পরে জানতে পারি, ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স এমনকি কোনো কাগজপত্র নেই বাসটির।’ তিনি বলেন, ‘আমার বোনের যে ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেব। যেন সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস না চালাতে পারে, এমন যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। আমার ছোট বোনটি আজ স্কুলেও যেতে পারছে না।’
এদিকে বাসটি সম্পর্কে রাজবাড়ী বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলে রিসিভ করেননি। তবে বাসটির ফিটনেস সনদ নেই বলে স্বীকার করেন রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘বাসটির হয়তো দু-এক মাস আগে ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং নতুন করে ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়কে চলতে গেলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও ঘটনার পর থেকে আমরা খোঁজখবর রাখছি, হাসপাতালে আমাদের লোকও গিয়েছিল। পরিবারটির সঙ্গে আমরা আগামীকাল শনিবার বসব।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]