[ad_1]
বাংলাদেশে শিশুদের ডায়রিয়া চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এতে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঝুঁকি বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের একটি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে ১ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৮ হাজার ২৯৪টি শিশুর ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় শিশুদের চিকিৎসা গ্রহণের ধরন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ (৫৫ শতাংশ) ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ মাত্র ৬ শতাংশ শিশুর আমাশয় (রক্তযুক্ত পায়খানা) ছিল, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলেরা ছাড়া সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৭৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়াই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাশয় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক (জিংক বা ওআরএস ছাড়া) ব্যবহারের প্রবণতা সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চেয়ে বেশি ছিল (১৫ শতাংশ বনাম ৯ শতাংশ)। যদিও ৮৫ শতাংশ শিশু ওআরএস (খাবার স্যালাইন) গ্রহণ করেছে। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই জিংক ও ওআরএস দুটোই পেয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে শিশুরা হাসপাতালে আসার আগে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যারা অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে এবং নেয়নি সে তুলনায় এই হার যথাক্রমে ২০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ ছিল। এতে এমন ইঙ্গিত মেলে যে, অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বরং শিশুদের অসুস্থতার তীব্রতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
অভিভাবকদের মধ্যে দ্রুত সুস্থ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, ঐতিহ্যগত অভ্যাস, ফার্মেসির প্রতি আস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দূরে হওয়ার কারণে অনেকে ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। গবেষণায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে আগত শিশুদের মধ্যে যারা মির্জাপুর উপজেলা থেকে বেশি দূরত্বের এলাকা থেকে এসেছে, তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার তুলনামূলক বেশি। এর অর্থ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সহজলভ্যতা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারকে প্রভাবিত করছে।
গবেষণায় বারবার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) ভয়াবহতার কথা উঠে এসেছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে সরাসরি ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট দশমিক ৪ ৯৫ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ ছিল। এ ছাড়া, ২০৫০ সালের মধ্যে এএমআর ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি থেকে প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন থেকে ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের উচ্চ প্রবণতা দেখা যায়, বিশেষ করে শিগেলা এবং ভিব্রিও কলেরার মতো ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়।
গবেষকেরা অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন, ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও অনুশীলনের ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দেওয়া দরকার। এ ছাড়া, ওআরএস ও জিংকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করাও অপরিহার্য।
গবেষণা প্রতিবেদনটি গত ২০ জুলাই বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]