শরিফুল ইসলাম (ছদ্মনাম) (৩২)। বাড়ি পাবনা জেলায়। ঢাকায় গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন রমিলা খাতুনকে (ছদ্মনাম) (২৩)। তাঁরা ঢাকায় বসবাস করছেন। দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু গত ৩-৪ মাস ধরে কলহ চলছিল। কারণ রমিলা টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ঘরে-বাইরে ভিডিও বানিয়ে টিকটকে প্রকাশ করেন। অপরিচিত লোকদের সঙ্গে বাইরে গিয়ে ভিডিও শুট করেন। শরিফুলের এটি পছন্দ নয়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কলহ চলছে। একপর্যায়ে রমিলা বাবার বাড়ি চলে যান। শরিফুলও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

স্বামী যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় গত ৭ জুলাই ঢাকায় লিগ্যাল এইড অফিসে আবেদন করেন রমিলা। রমিলা অভিযোগে বলেছেন, স্বামী তাঁকে মারধর করে বের করে দিয়েছেন। ভরণ-পোষণ দেন না।

ওই দিনই তাঁর স্বামীকে এসএমএস এবং ফোন কল করে বিষয়টি জানায় লিগ্যাল এইড। বুধবার (৩০ জুলাই) ছিল তাঁদের মীমাংসা সভার তারিখ। ঢাকার লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. সায়েম খানের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। এ সময় উভয় পক্ষ অভিযোগ তুলে ধরেন। তখন দুই পক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।

শুনানির সময় রমিলা স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করার অভিযোগ তুলে ধরেন। আর স্বামী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রী ৩-৪ মাস ধরে টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁর সঙ্গে আমার একটু মনোমালিন্য হয়েছে। টিকটক ছাড়লে তাঁকে নিয়ে সংসার করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

রমিলাও তাঁর সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন এবং মামলা ছাড়াই সমস্যার সমাধান করে দেন।

শরিফুল ইসলামের পক্ষের আইনজীবী আবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিগ্যাল এইডের মধ্যস্থতায় তাঁদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষই খুশি।’

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই বছর আগে প্রেম করে বিয়ে হয়েছে। ঢাকায় বাইপাইলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। তিন-চার মাস আগে স্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু লোকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মাঝেমধ্যে টিকটক ভিডিও শুট করার কথা বলে বিভিন্ন স্থানে যেত। একবার এভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন বাসায় ফিরেছে। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর সে বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপর আমি আর যোগাযোগ করিনি।’

শুনানির সময় রমিলার কাছ থেকে মারধর ও নির্যাতনের মেডিকেল সার্টিফিকেট চাওয়া হলে তিনি দিতে পারেননি। অভিযোগের পক্ষে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণও দিতে পারেননি তিনি। শরিফুল স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, টিকটক ভিডিওতে আসক্ত হওয়া এবং অপরিচিত লোকদের সঙ্গে বাইরে যাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি। স্ত্রী টিকটক ভিডিও বানানো ছেড়ে দিলে তাঁকে গ্রহণ করতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

পরে রমিলা স্বামী শরিফুলের এই শর্তে রাজি হয়েছেন। এরপর তাঁদের লিগ্যাল এইড অফিস থেকে একটি নিষ্পত্তিনামা দেওয়া হয়। তাঁরা শর্ত মেনে একসঙ্গে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. সায়েম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার বাইরে স্বল্প সময়ে ও বিনা খরচে প্রার্থীদের সেবা দেওয়া হয়। লিগ্যাল এইড থেকে সেবা নিতে বা আবেদন করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। কেউ আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপক্ষকে এসএমএসের মাধ্যমে মীমাংসা সভার জন্য নির্ধারিত তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (বিচারক) উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

লিগ্যাল এইড থেকে সেবা পাবেন যারা

(ক) শিশু।

(খ) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি।

(গ) শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু।

(ঘ) নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে।

(ঙ) ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ব্যক্তি।

(চ) পারিবারিক সহিংসতার শিকার বা সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি।

(ছ) বয়স্ক ভাতা পান এমন ব্যক্তি।

(জ) ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মা।

(ঝ) দুর্বৃত্ত ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ নারী বা শিশু।

(ঞ) আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

(ট) অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারী।

(ঠ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

(ড) আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি।

(ঢ) বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল।

(ণ) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি।

(ত) জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশকৃত বা বিবেচিত ব্যক্তি।

(থ) লিগ্যাল এইড কর্তৃক চিহ্নিত আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থসামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যিনি

আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা মামলা পরিচালনায় অসমর্থ।