[ad_1]
আগুনে দগ্ধ রোগীদের শারীরিক আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল মানসিক ধাক্কাও সইতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের মাত্রাটা বেশি। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিশুদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হঠাৎ বিমান ধসে আগুন ধরে যাওয়া, চোখের সামনে সহপাঠীদের মর্মান্তিক মৃত্যু হওয়া আর নিজেও নানা মাত্রায় দগ্ধ হওয়ায় তারা তীব্র মানসিক আঘাত পেয়েছে।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি রোগী যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে শিশু ২৭ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থা ৩ জনের। তাদের মধ্যে একজন লাইফ সাপোর্টে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইনস্টিটিউটে অবস্থান করে দেখা গেছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), অস্ত্রোপচার-পরবর্তী (পোস্ট-অপারেটিভ) ওয়ার্ড, হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) সামনে চিন্তিত চেহারায় দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন নারী ও পুরুষ। তাঁরা চিকিৎসাধীন শিশুসহ রোগীদের স্বজন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, অসহনীয় শারীরিক কষ্ট ছাড়াও সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁরা চিন্তিত।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তিনজন চিকিৎসক আলাপকালে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, দগ্ধ রোগীদের বিভিন্ন মানসিক আঘাত; যেমন ভয়, আঘাত-পরবর্তী সমস্যা (পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার—পিটিএসডি), উদ্বেগ, বিষণ্নতা বেশি থাকে। পোড়ার তীব্রতা, ব্যথা-জ্বলুনির মাত্রা এবং আগে থেকে বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো এ সময় আরও ঝুঁকি বাড়ায়। স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। শিশুদের মন কোমল। এই বয়সে এমন মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হলে তাদের মন বড় আঘাত পায়।
নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞান সাময়িকী এলসেভিয়ারের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগুনে পোড়া বিশ্বব্যাপী একটি জনস্বাস্থ্য উদ্বেগের বিষয়। মনোসামাজিক প্রতিবন্ধকতা পোড়া রোগীদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ। তাদের মধ্যে পিটিএসডি ও মেজর ডিপ্রেশনাল ডিসঅর্ডার (এমডিডি) বেশি দেখা যায়।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন (জরুরি বিভাগ) শাওন বিন রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানসিক আঘাতের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিস্ট টিম শুরু থেকে কাজ করছে। আহতদের মধ্যে যাঁরা কথা বলতে পারেন, যাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হচ্ছে, তাঁদের কাউন্সেলিং করা যাচ্ছে। শিশুদের জন্য মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আমরা অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং করছি।’
ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এম এ হামিদ পলাশ বলেন, ‘বেশির ভাগ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত কাটাতে সময় লেগে যাবে। শিশুমন এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছে না। এমন শিশুরোগী রয়েছে, যারা কয়েক দিন ধরে ছটফট করছে। হাসপাতালে থাকতে চায় না। তাদের মনে এখনো ভয় কাজ করছে।’
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষের মধ্যে মানসিক আঘাত দেখা যায়। যাঁরা সংবাদ সংগ্রহ করছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন, উদ্ধার করছেন—ভুক্তভোগী সবার মধ্যেই এমন জটিলতা দেখা যায়। শিশুদের ওপর প্রভাব বেশি পড়ে। ফলে তারা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবে না, ঘুম হবে না, বিছানায় প্রস্রাব করবে, বিষণ্ন থাকবে। বিভিন্নভাবে তাদের মানসিক আঘাত প্রকাশ পাবে।’
ডা. হেলাল উদ্দিনের মতে, সব রোগীর জন্য বিশেষ মনোচিকিৎসার প্রয়োজন হবে না। আহত শিশুশিক্ষার্থীদের বেশির ভাগের মানসিক আঘাত তিন থেকে ছয় সপ্তাহে কেটে যাবে। যাদের আরও সময় লাগবে, তাদের বাড়তি চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া পরিবার ও শিক্ষকদের মাধ্যমে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের সঙ্গে আন্তরিক সময় কাটাতে হবে। প্রার্থনা, শোক প্রকাশের সুযোগ করতে দিতে হবে। এ ছাড়া সহজে ঘুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]