বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা


প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা নির্ণয়ে চিকিৎসকদের জন্য এক নতুন সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে লিথুয়ানিয়ার ২৯ বছর বয়সী এক নারীর বিরল সমস্যা। বারবার চেষ্টা করেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হওয়া এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) চিকিৎসায়ও ফল না আসায় ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে তাঁর বন্ধ্যত্বের কারণ হিসেবে ধরা পড়েছে মানব বীর্য প্লাজমায় অ্যালার্জি।
ঘটনার বর্ণনায় লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারী তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে সন্তান ধারণের চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সফল হচ্ছিলেন না। দুই দফা আইভিএফ চিকিৎসাও ব্যর্থ হয়। স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় বন্ধ্যত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য তাঁর সঙ্গীর কোনো প্রজনন পরীক্ষা করা হয়েছিল কিনা সে তথ্য জানানো হয়নি।
তবে, ওই নারীর হাঁপানি এবং ছাঁচ, বিড়ালের লোম ও ধুলার মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অ্যালার্জির ইতিহাস ছিল। তাই তাঁর অ্যালার্জি প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে কিনা তা দেখতে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে যান তিনি।
চিকিৎসা কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই নারীর শরীরে ইওসিনোফিলের (এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে) পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। ত্বকের পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর পরিচিত অ্যালার্জির কারণগুলো ছাড়াও তিনি মাইট, আগাছা ও ঘাসের পরাগ এবং পোকামাকড় ও কুকুরের অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল।
রোগী বিশেষত ‘ক্যানিস ফ্যামিলিয়ারিস অ্যালার্জেন ৫’ (ক্যান এফ ৫) নামক একটি প্রোটিনের প্রতি সংবেদনশীল, এটি সাধারণত কুকুরের খুশকি ও প্রস্রাবে পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা তাঁদের প্রতিবেদনে লিখেছেন, ক্যান এফ ৫-এর প্রতি সংবেদনশীলতা মানব বীর্যের মধ্যে পাওয়া একই ধরনের প্রোটিনের প্রতি সংবেদনশীলতাও নির্দেশ করতে পারে।
চিকিৎসা কেন্দ্রের একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে রোগী নিশ্চিত হন, তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে অরক্ষিত যৌন মিলনের পর নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন হাঁচির মতো সমস্যা হতো। তিনি জানান, গর্ভধারণে অক্ষমতা নিয়ে আগেও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা এই লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন।
চিকিৎসকেরা তখন ওই নারীর সঙ্গীর বীর্যের নমুনা ব্যবহার করে আরও অ্যালার্জি পরীক্ষা করেন। রোগীর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, তাঁর মানব বীর্য প্লাজমা অ্যালার্জি রয়েছে। বীর্য প্লাজমা হলো বীর্যের তরল উপাদান, যেই তরল শুক্রাণু বহন করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বীর্যের প্রতি সংবেদনশীলতা ‘বন্ধ্যত্বের একটি সম্ভাব্য কারণ’। কারণ এই ধরনের অ্যালার্জি প্রজনন অঙ্গগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তবে বীর্য প্লাজমা না থাকার পরও এই অ্যালার্জি কীভাবে ওই নারীর আইভিএফ চিকিৎসাও ব্যর্থ হয়েছে স্পষ্ট নয়।
এর চিকিৎসা পদ্ধতিও বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বীর্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমানোর রোগীর শরীরে ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান ঘনত্বের তরল প্রবেশ করানো হয়। এতে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের প্রতি সহনশীলতা তৈরি হয়। তবে চিকিৎসকেরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, লিথুয়ানিয়ায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি সহজলভ্য নয়। পরিবর্তে, তাঁরা রোগীকে যৌন মিলনের আগে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবনের পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকেরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, ওই দম্পতি তাঁদের পরামর্শ অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু এই পদ্ধতি ‘অকার্যকর’ প্রমাণিত হয়েছে। তিন বছর পরে একটি ফলো-আপে এসে ওই নারী জানান, তিনি তখনো গর্ভধারণে অক্ষম। সঙ্গীর বীর্যের সংস্পর্শে এলে এখন নতুন অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন—ভালভাতে জ্বালাপোড়া, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া এবং চোখ থেকে পানি ঝরা অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তাঁকে আর নতুন কোনো চিকিৎসা সুপারিশ করেননি।
বিশ্বজুড়ে, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মানব বীর্য প্লাজমা অ্যালার্জির প্রায় ৮০টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছেন। গর্ভ ধারণের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে।
বন্ধ্যত্বের কারণ প্রায়শই সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তাই, ওই নারীর চিকিৎসকেরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘এই ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়, অ্যালার্জির সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্কহীন মনে হলেও, প্রজনন স্বাস্থ্যের জটিলতার সঙ্গে যখন এটি যুক্ত হয় তখন চিকিৎসা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এর ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।