পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে কোটি টাকার দুর্নীতি


ক্রাইম জোন ২৪।। পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেলা সিভিল সার্জনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় দুদক পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ শেখ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক। দুদক পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে দুদকের দুটি অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিরা হলেন—
১. ডা. মো. মিজানুর রহমান – সিভিল সার্জন, পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল
২. ডা. ফারহানা রহমান – সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ওষুধ এবং এমএসআর সামগ্রী সংক্রান্ত সার্ভে কমিটির সভাপতি
৩. ডা. মো. নিজাম উদ্দিন – আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সার্ভে কমিটির সদস্য সচিব
৪. ডা. সুরঞ্জিত কুমার সাহা – জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ও সার্ভে কমিটির সদস্য
৫. মো. আল আমিন গাজী – জেলা হাসপাতালের স্টোর কিপার
৬. এস.এম. শামসুল আরেফীন – ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ বাংলা কর্পোরেশন’-এর মালিক
৭. মো. হানিফুল ইসলাম – ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘উইড্রা বিডি’-এর মালিক
৮. মো. জহীরুল ইসলাম – ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আনহা মেডিকেল টেকনোলজি’-এর মালিক
৯. মো. রাশেদুজ্জামান (এরশাদ) – ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেডি স্কয়ার’-এর মালিক
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সরবরাহকৃত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী (এমএসআর) সরবরাহকারী চারটি প্রতিষ্ঠান পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের অনুকূলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের চুক্তিবদ্ধ ছিল।
এই চুক্তির অধীনে তারা হাসপাতালের সার্ভে কমিটির সভাপতিসহ দুই সদস্যের কাছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৭ টাকার ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়ার কাগজপত্র তৈরি করে এবং হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই অর্থ পরিশোধ করে।
কিন্তু ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেই সময় স্টক রেজিস্টার যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে বলে রেকর্ড থাকলেও বাস্তবে হাসপাতালের স্টোরে তা পাওয়া যায়নি।
এরপর ২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তরা গোপনে একটি ট্রাক ভর্তি ওষুধ এনে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেন। তবে দুদকের দল এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওষুধবাহী ট্রাকসহ মালামাল জব্দ করে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলার পরবর্তী তদন্তে আরও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “আমি এখনো মামলার বিষয়ে কিছু জানি না। তবে তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি।”