সেই জামায়াত নেতার কাছে ব্যাখ্যা চাইল চবি প্রশাসন


‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম-৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামের এই মন্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে এই পত্র প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে ওই নেতাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের আমির।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে ওই নেতাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের ওপর। আমরা এই জায়গার মালিক, তাই অন্যায় কিছু মেনে নেব না। আমাদের সম্মান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করে, তবে আমরা জনগণ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ভিডিওটি গতকাল শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
তবে, ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নিজের ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওই জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। আমার শব্দচয়নে কিছুটা ভুল হতে পারে, তবে আমার উদ্দেশ্য এমনটি ছিল না। আমি গত ১৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেছি। শিক্ষার্থীরা জানে আমি তাদের কী পরিমাণ স্নেহ করি। আহত ছাত্রদের খোঁজখবর নিয়েছি, সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। আমার বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভুল-বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রকৃত সন্ত্রাসীরা এই এলাকার নয়, বাইরে থেকে এসেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
জামায়াত নেতার এ ধরনের বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান ও শিবির নেতা খালেদের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তাঁর গায়ে হাত তোলেন। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত। পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২১ জন।
ক্রাইম জোন ২৪