শিরোনাম

গাজাবাসীর জন্য ভিজিটর ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজাবাসীর জন্য ভিজিটর ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ধরনের ভিজিটর ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে এ তথ্য জানায়। পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু চিকিৎসা ও মানবিক কারণে অস্থায়ী ভিসা দেওয়া হয়েছিল। সেসবের পদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য নতুন করে ভিসা দেওয়া স্থগিত রাখা হলো।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে কট্টর ডানপন্থী কর্মী লরা লুমারের এক্স-এ দেওয়া একাধিক পোস্ট। সেসব পোস্টে বারবার তিনি এই ভিসা কর্মসূচির সমালোচনা করে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ‘জঘন্য’ প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের এ ঘোষণার পর শনিবার এক্সে দেওয়া পরবর্তী পোস্টগুলোতে লুমার এ সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেন এবং ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ধন্যবাদ জানান।

এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে কিছু ফিলিস্তিনি অধিকার গোষ্ঠী। প্যালেস্টাইন চিল্ড্রেন’স রিলিফ ফান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই সিদ্ধান্ত আহত ও গুরুতর অসুস্থ শিশুদের গাজা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এনে জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা দেওয়ার আমাদের সক্ষমতার ওপর এক ধ্বংসাত্মক এবং অপূরণীয় প্রভাব ফেলবে।

ফিলিস্তিনি শিশুদের সহায়তাকারী এই সংস্থাটি জানিয়েছে, চিকিৎসা কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা ২০২৪ সালে ১৬৯ জন শিশুকে গাজা থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং তাদের চিকিৎসার জন্য মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভ্রমণ নথিধারীদের ৬৪০টি ভিসা ইস্যু করেছে। এর মধ্যে বি১ /বি ২ ভিজিটর ভিসা ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার সুযোগ দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ আড়াই বছর ধরে চলছে। ২২ মাসে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬১ হাজার ৮২৭ জন নিহত হয়েছে। এই সময়ে গাজার বেশিরভাগ চিকিৎসা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বর্তমানে সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে।

মানবিক সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, গত মার্চ মাস থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলো গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারছে না। ইসরায়েলি সরকার দাবি করছে, তাদের ত্রাণ সংক্রান্ত নিয়মগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে হামাস সেই খাদ্যসামগ্রী দখল করতে না পারে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা, মানবিক সংগঠন এবং গাজায় অবস্থানরত সাংবাদিকরা সতর্ক করেছেন যে অঞ্চলটি এখন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখে রয়েছে।

জুলাই মাসের শেষের দিকে বিবিসি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং রয়টার্সের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে সতর্ক করে জানায়, গাজার সাংবাদিকেরাও এখন অনাহারের ঝুঁকিতে আছেন।

বিবৃতিতে তারা লিখেছিলেন, ‘অনেকটা সময় ধরে এই স্বাধীন সাংবাদিকরাই গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বের চোখ ও কান হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরা যাদের নিয়ে সংবাদ করছেন, এখন তাঁদের মতোই শোচনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।’

জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় ‘বাস্তব দুর্ভিক্ষ’ চলছে, তবে তার প্রশাসন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি দৃঢ় সমর্থন বজায় রেখেছে।

এদিকে, নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে গাজা শহর দখলের চেষ্টায় আছেন। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক ’কনসেন্ট্রেশন জোন’-এ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button