বিআইটির আদলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আমরণ অনশনে চার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (বিআইটি) আদলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করছেন বরিশাল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ১০ জন গতকাল সোমবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিআইটির আদলে স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের দাবিতে গত রোববার এই চার কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। তাঁদের কর্মসূচিতে পরে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগ দেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রেসক্লাবের সামনে একটি বিক্ষোভ মিছিলও করেন অনশনরতরা।
ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি বিআইটি আদলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতে চার কলেজকে যাতে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। এই চার কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই দ্বৈত কাঠামোর অবসান করে কলেজগুলো বিআইটির আদলে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে পরিচালিত করতে হবে।’
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, ‘কলেজ পরিচালনায় দ্বৈত কাঠামোর ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সমস্যাগুলো খুব সহজে সমাধান হয় না। এতে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বললে তারা বলে, “এসব সমাধানের দায়িত্ব আমাদের নয়। তোমরা এটা কারিগরিকে বলো।’’ কারিগরিকে বললে তারা বলে—এসব সমাধানের ক্ষমতা তাদের নেই।’
আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গত ২০ মে থেকে আন্দোলন করে আসছি। জেলাপর্যায়ে মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়। কোনো ধরনের আশ্বাস না পেয়ে আমরা ঢাকায় এসে আমরণ অনশন শুরু করেছি। আমাদের দাবি যৌক্তিক ও সুস্পষ্ট। আমরা বৈষম্যের অবসান চাই। তিন মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছি। স্মারকলিপি দেওয়া, অবস্থান কর্মসূচি, প্রেস ব্রিফিং, ব্লকেড কর্মসূচি—সবই করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি।’
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী তৌফিক মাহামুদ নির্জন তাঁদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংস্কারের আন্দোলন। সর্বশেষ গত ২৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। এরপর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপরও আমাদের দাবি না মানলে গত রোববার থেকে আমরণ অনশন শুরু করি।’
সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী আওসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষকসংকট। দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার জন্য যে ধরনের ফ্যাসিলিটি দরকার, তার পাঁচ ভাগও আমাদের নেই। নন-ক্যাডার থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিলে ক্যাডার হয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে যায়। শিক্ষক নিয়োগ কাঠামোতেও সমস্যা রয়েছে। এ জন্য বিআইটির আদলে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন করে আমাদের কলেজগুলোতে স্বায়ত্তশাসন দিলে একাডেমিক পর্যায়ে গতিশীলতা বাড়বে। গত ২৭ জুলাই শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। আলোচনায় শিক্ষক নিয়োগে সমস্যা, দ্বৈত কাঠামোসহ বেশ কিছু সমস্যার কথা বলে আমাদের দাবি উপস্থাপন করা হয়। তিনি বলেছিলেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। অথচ কোনো সমাধান আজও পেলাম না।’
ক্রাইম জোন ২৪