ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা


রাতের ট্রেনযাত্রায় কেবিনে যাত্রীদের ঘুমানোর জন্য দেওয়া হয় বেডিং (চাদর, বালিশ, কম্বল)। এ জন্য টাকা টিকিটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বেডিং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং মান উন্নয়নের জন্য চার্জ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই বেডিং চার্জ বাড়ালে কেবিনের টিকিটের দাম, অর্থাৎ ভাড়াও বাড়বে।
বর্তমানে আন্তনগর ও মেইল ট্রেনে উচ্চ শ্রেণির (বার্থ বা কেবিন) যাত্রীপ্রতি ৫০ টাকা করে বেডিং চার্জ নেওয়া হয়, যা ভাড়ার মধ্যেই থাকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫০ টাকায় এখন আর মানসম্মত বেডিং সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ৩০ জুলাই রেলওয়ের ট্রাফিক কমার্শিয়াল শাখা এই চার্জ বাড়িয়ে দ্বিগুণ (১০০ টাকা) করার প্রস্তাব দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চাদর, কম্বল, বালিশের কাভার ধোয়া ও আয়রন করা, নতুন বেডিংসামগ্রী কেনা, ট্রেনে সরবরাহের জন্য ট্রলি ও পোর্টারের বেতন ইত্যাদি খাতে প্রচুর ব্যয় হয়। বর্তমানে ৫০ টাকার মধ্যে এসবের মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে চার্জ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বেডিং পরিষ্কারের জন্য রেলওয়ের চারটি অঞ্চলে আলাদা ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া আছে। তবে বর্তমানে ৫০ টাকায় এ কাজ নিতে আগ্রহী ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু কেবিনে সাধারণত উচ্চ শ্রেণির যাত্রীরা ভ্রমণ করেন, তাই বেডিং চার্জ কিছু বাড়লেও তেমন সমস্যা হবে না।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ট্রেনের কেবিনের ভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট ও বেডিং চার্জ অন্তর্ভুক্ত থাকে। বেডিং চার্জ দ্বিগুণ করলে ট্রেনের কেবিনের যাত্রীপ্রতি টিকিটের দাম ৫০ টাকা বেড়ে যাবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেন গত বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে বেডিং পরিষেবা দিতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। লন্ড্রির খরচ, বিদ্যুৎ বিল, ধোলাই ও পলিথিনে র্যাপিং—সব মিলিয়ে আগের টাকায় মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বেডিং চার্জ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের রাতের কেবিনে যাত্রীদের ঘুমানোর জন্য কাভারসহ একটি বালিশ, বিছানার চাদর এবং কাভারসহ কম্বল আছে। তবে এগুলোর মান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যাত্রীরা সন্তুষ্ট নন। পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় অনেক যাত্রী নিজেরা পাতলা কম্বল বা শাল সঙ্গে আনেন।
ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রী আতিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে ট্রেনে ঢাকা থেকে নাটোরে যাই। মাঝেমধ্যে রাতের কেবিন পাই। তবে রেলের দেওয়া চাদর ও কম্বলের গুণগত মান খুব খারাপ। অনেক সময় গন্ধ থাকে, ধুলাও থাকে। কম্বল পুরোনো ও অস্বস্তিকর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এখন যা দেওয়া হয়, সে জন্যই টাকা বাড়িয়ে মান না বাড়ালে যাত্রীদের জন্য খরচই শুধু বাড়বে।’
রেলওয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী বেডিং চার্জ বাড়ানো হলে কেবিনের যাত্রীপ্রতি ভাড়া বাড়বে ৫০ টাকা। বালিশ, চাদর, কম্বলের মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানো হলে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তাই পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভাড়া বাড়ানোর আগে পরিষেবা উন্নয়ন নিশ্চিত করাই হবে রেল কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব।
যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেলের কেবিন সেবার মান উন্নয়নের বদলে আগে চার্জ বাড়ানোর চিন্তা যাত্রীবান্ধব নয়। আগে সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। না হলে এটি হবে যাত্রীদের প্রতি অবিচার। তিনি বলেন, বেডিং চার্জ বাড়ানোর উদ্দেশ্য ঠিকাদারকে লাভবান করা কি না, তাও দেখার বিষয়। কারণ, এখান থেকে কর্মকর্তারা সুবিধা পেতে পারেন। উন্নত সেবা না দিয়ে চার্জ বাড়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে। বেডিং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে এবং নিয়মিত মান নিয়ন্ত্রণ হলে যাত্রীরা খুশি হবেন। কিন্তু এখন যাত্রীরা নিজে কম্বল বা চাদর সঙ্গে নেন, এটি রেলের ব্যর্থতা।