আসেনি প্রত্যাশার বিনিয়োগ


প্রতিশ্রুতি ও প্রচারণা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসেনি। আগের তুলনায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে এসেছে ছন্দ এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ—বিনিয়োগ খাতে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। বরং বাস্তবতা বলছে, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থিতিশীল ডলারের বাজার, মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হারকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন উদ্যোক্তারা।
আস্থার সংকটে ভুগছেন উদ্যোক্তারা। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, ঋণের চড়া সুদ এবং কর-ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৬ শতাংশ ছুঁয়েছে, যা নতুন উদ্যোগ নেওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এনবিআর শতাধিক পণ্যে ভ্যাট ও কর বাড়িয়ে দেয়, ফলে উৎপাদন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বাজারে চাহিদা সংকুচিত, মুনাফার পথ সংকীর্ণ, আর নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। এর প্রভাবে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগেও ধস চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ ২৭৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। দেশীয় বিনিয়োগ সামান্য বাড়লেও একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমেছে মাত্র ৬.৪ শতাংশে—২০০৩ সালের পর যা সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়, যা ব্যাংক ঋণের ২৭ শতাংশেরও বেশি।
মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে এলসি খোলা কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও সংকুচিত।
অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ চাঙা করতে হলে ব্যক্তি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতে, বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
যদিও সরকারের দাবি, বিনিয়োগ পরিবেশ এখন ভালো এবং চীনের একটি কোম্পানি ইতিমধ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, বাস্তব চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে এখনো জোর ধাক্কা খাচ্ছে অর্থনীতি।