শিরোনাম

এক বছরেও সন্ধান মেলেনি শাহে আলমের, অসহায় পরিবার

এক বছরেও সন্ধান মেলেনি শাহে আলমের, অসহায় পরিবার

এক বছর পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি ভোলার চরফ্যাশনের নিখোঁজ জেলে মো. শাহে আলমের। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারডুবির পর নিখোঁজ হন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এভাবে হারিয়ে যাওয়ায় থমকে গেছে স্ত্রী-সন্তানদের জীবন। আজও আশায় বুক বাঁধে শাহে আলমের পরিবার—হয়তো একদিন ফিরে আসবেন তিনি।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই চরফ্যাশনের আহাম্মদপুর ইউনিয়নের এক মালিকানাধীন ট্রলার ১৩ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। ৩ আগস্ট শুকনাখালী ঘাটে ফেরার পথে শিবচর এলাকায় ট্রলারটি ডুবোচর ও ঘূর্ণিঝড়ের স্রোতে উল্টে যায়। ওই দুর্ঘটনায় পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও আটজন নিখোঁজ হন। পরে চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়, বাকি চারজনের আজও খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজদের একজন ছিলেন শাহে আলম।

শাহে আলমের স্ত্রী নেকু বেগম স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় আজও প্রহর গুনছেন। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তাকান ঘরের দরজার দিকে, যদি কখনো স্বামী ফিরে আসেন। দুই সন্তানের মা নেকু বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, দরজায় কড়া নাড়ছে। ছুটে গিয়ে দেখি, কেউ নাই। মনে হয়, বেঁচে থাকলেও কোনো দ্বীপে আটকে আছে, কেউ হয়তো খুঁজে পায়নি আমার স্বামীকে। স্বামী বলেছিল মাছ ধরেই ফিরে আসবে। এক বছর হয়ে গেল, কোনো খবর নাই। আমি শুধু চাই, যদি মরেও গিয়ে থাকে, লাশটা অন্তত যদি পেতাম, তাহলে জানাজা পড়ে কবরে শুইয়ে দিতে পারতাম।’

স্বামীর অনুপস্থিতিতে দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন নেকু। একটি মেয়ে বিয়ের উপযোগী, অপরজনের পড়ালেখা প্রায় বন্ধ। হাঁস-মুরগি পালন আর অন্যের বাসায় কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলছে। জ্বরে আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসার টাকা নেই বলে জানান তিনি।

নেকু বেগম আরও বলেন, ‘মৎস্য অফিস থেকে একবার কিছু টাকা পেয়েছিলাম, ভাইয়েরাও সাহায্য করেছে। কিন্তু আর কত সাহায্য করবে? সরকার যেন আমাদের মতো পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়।’

স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রফিক মাস্টার বলেন, ‘শাহে আলম সাহসী ও অভিজ্ঞ জেলে ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও মালিকেরা মাছ ধরতে পাঠায়। বিপদের শিকার হয় গরিব পরিবারগুলোর লোকজন।’

চরফ্যাশনের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, ‘শাহে আলমের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ এলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে। তবে নিখোঁজ প্রমাণে কাগজপত্র দিতে হয়, যা অনেকেই দিতে পারেন না।’

চরফ্যাশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নোমান সিকদার বলেন, ‘নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলো সবচেয়ে অবহেলিত। মৃতরা ক্ষতিপূরণ পেলেও নিখোঁজদের পরিবার পড়ে অনিশ্চয়তায়। চরাঞ্চলের অসংখ্য জেলে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়, কিন্তু অনেকেই আর ফিরে আসে না।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button