১০ আগস্ট জাতীয় নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা দেবে ইসি, ৪৫ লাখ নতুন মুখ


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনার মধ্যে সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১০ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। এতে প্রায় ৪৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া তালিকা থেকে বাদ যাবে ২১ লাখ মৃত ভোটার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খসড়া তালিকা প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। আজ মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১০ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে র্নিচন কমিশন। যাচাই-বাছায়ের প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জানা যায়, খসড়া তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি জমা দেওয়া যাবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। ওইসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩১ আগস্ট। নতুনদের নাম যুক্ত এবং মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো একই বছরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার খসড়া তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। এর আগে গতানুগতি নিয়ম অনুযায়ি গত ২ জানুয়ারি খসড়া এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে ইসি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা নতুন ভোটারদের নিয়ে দ্বিতীয়বার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ তালিকায় ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে যাদের জন্ম, তাদেরকে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আরেকবার সম্পূরক বা খসড়া তালিকা প্রকাশ হতে পারে। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারির পর যাদের জন্ম এবং সেখানে চলতি বছরে তালিকা প্রকাশের সময়ে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী ১০ আগস্ট উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই তালিকা নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তিনি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সংশোধনের আবেদন জানাবেন। এই সময়ে ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদনও করা যাবে।
সূত্র জানায়, গত ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল ইসি। গত ২৫ মে পর্যন্ত হালনাগাদে মোট ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৬১ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩ জন। যার মধ্যে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্ম বা ভোটারযোগ্য ছিলেন কিন্তু ভোটার হননি এমন ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৯ জন রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৮, নারী ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫৭ ও ১৫৪ জন হিজড়া রয়েছেন। আর ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম এমন ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ২০৪ জন ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৮ হাজার ৩১৫, নারী ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬১ ও ২৮ জন হিজড়া রয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, এ সময় মৃত ভোটার কর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৪টি। এর মধ্যে সার্ভারে কর্তন এন্ট্রি করা হয়েছে ২০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৫টি।
ভোট নিয়ে যা ভাবছেন ভোটারেরা
সম্প্রতি ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রেজানুর রহমান তামিম। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ভোট দেওয়া নাগরিকের অধিকার। আমি অবশ্যই ভোট দেব। অন্যদেরও বলবো, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন।
তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে ভোটার হয়েছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দেননি। কারণ হিসেবে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুনেছি কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোট হয়ে যায়। তাই ভোট দিতে যাইনি।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি নিশ্চয়তা পাই যে আমি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে আমার ভোটটি কেউ আগেই দিয়ে দেবে না। তাহলে অবশ্যই ভোট দিতে যাব।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বিজন সরকার। যিনি ২০১৫ সালে ভোটার হয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি। ভোট না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোট দিলেও যা, না দিলেও তা। তাই ভোট দেওয়া আগ্রহ হয়নি। তবে এবার ভোট দেওয়ার ইচ্ছে আছে।
ঢাকার শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী তন্বী পাল বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালে ভোটার হয়েছি। শুধু ভোট দেওয়ার জন্য আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছি। ভোট দেওয়া আমার অধিকার দেবো না কেন? গত সংসদ নির্বাচনে থমথমে ভোটকেন্দ্রে যখন ভোট দিতে যাই। তখন আমার এক আত্মীয় বলেছিলেন, কিছু হলে জানি না। তারপরও আমি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসছি।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাই গত কয়েক বছরের মতো নির্বাচন না হোক। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই।’
গত ২ মার্চ ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ এবং নারী ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন। আর ৯৯৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।